এক দেশে ছিল এক যুবরাজ ।

এক দেশে ছিল এক যুবরাজ ।

এক দেশে ছিল এক যুবরাজ । কিন্তু খুব বেশি দিন সে যুবরাজ হিসাবে থাকতে পারলো  না । রাজার মৃত্যুতে অনেকটা কম বয়সেই তাকে রাজ্য ভার গ্রহন করতে হলো । রাজ্যভার গ্রহন করে রাজ্যের এবং রাজ্যের প্রজাদের জন্য কাজ করতে করতে এতটাই ব্যাস্ত হয়ে পড়েছিলেন  যে,  কখন যে তার বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি । 

একদিন রাজ্য সভার সবাইকে নিয়ে আলাপ করতে গিয়ে উপলদ্ধি করতে পারলেন যে, যত তারাতারি সম্ভব বিয়ে করা প্রয়োজন না হলে ভবিষ্যতে রাজ্যভার গ্রহন করার আর কেও থাকবে না । 

যেই চিন্তা সেই কাজ, মন্ত্রীকে যুবরাজ (বর্তমান রাজা, গল্পের সার্থে আমরা তাকে যুবরাজ বলছি)  তার মনের কথা বলা মাত্র মন্ত্রী মশায় আশে পাশের দেশে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন ।  যুবরাজ দেখতে ছিলেন অসম্ভব সুন্দর, লম্ব, সাহসী এবং ভাল সব দেশের রাজারাই তাদের মেয়েদের জন্য এমন জামাই খুজছিলেন । 

এক এক করে ৫০ জন রাজা তাদের মেয়েদেরকে যুবরাজের সাথে বিয়ে দেবার জন্য আগ্রহ জানিয়ে পত্র পাঠালেন । এখন মন্ত্রী এবং যুবরাজতো পড়লেন বিপদে এক সাথে এতগুলো চিঠির উত্তর কি দিবেন আবার সবাইকে ‘না’ বলবেন কিভাবে । অনেক ভেবে চিন্তে যুবরাজ এক বুদ্ধি বের করলেন । মন্ত্রীকে বললেন সকল রাজাদের চিঠি দিয়ে জানানোর জন্য যে, যুবরাজ বিয়ে করার আগে সকল রাজকন্যাদের জন্য তার প্রাসাদে এক মিলন মেলার আয়োজন করেছেন । এই মিলন মেলায় যারা যে সকল রাজকন্যারা অংশগ্রহন করবেন যুবরাজ তাদের মধ্যে থেকেই একজন রাজকন্যাকে বিয়ে করবেন । 

চিঠি পেয়ে অর্ধেক রাজারা তাদের রাজকন্যাদের এই মিলন মেলায় পাঠাতে রাজি হলেন না, কারন তাদের রাজকন্যারা কখনও একা একা কোথাও যায়নি,  তাছাড়া যুবরাজের সুনাম সুনেছেন কিন্ত কখনও তো তাকে দেখেনি এমন অবস্থায় কি করে তাদের রাজকন্যাদের পাঠাবে ? 

যাই হোক কিছু কিছু রাজা আবার এই প্রস্তাবে রাজি হলেন এবং ২৫ জন রাজকন্যা এই মিলন মেলায় অংশগ্রহন করতে আসলেন । এবারও যুবরাজ পড়লেন বিপদে কিভাবে এই ২৫জন রাজকন্যা থেকে ১ জন রাজকন্যাকে খুজে নিবেন বিয়ে করার জন্য ?

যুবরাজ এবার কিছু কৌশল এর আশ্রয় নিলেন । 

যে সকল রাজকন্যারা মিলন মেলায় অংশগ্রহন করতে আসলেন তাদের সবাইকে ৫টি রুমে প্রথমদিন থাকতে দিলেন । রাজকন্যারা সব সময় বিশাল বিশাল রুম নিয়ে থাকেন ! তারা কিনা থাকবেন একরুমে ৫জন ? এটা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারলেন না কোন কোন রাজকন্যা । রাতটা কোন রকম কাটতেই ৫জন রাজকন্যা বিরক্তি নিয়ে তারা যুবরাজের রাজপ্রাসাদ থেকে বিদায় নিলেন । 

যুবরাজ পরের দিনই সকল রাজকন্যাদের জন্য আলাদা আলাদা রুম এবং যাবতীয় সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিলেন । 

এরপর একদিন যুবরাজ ঘোষনা দিলেন যে, তিনি রাজকন্যাদের হাতের রান্না খেতে চান, যে যেটা ভাল রান্না করতে পারেন সেটি যাতে তারা প্রস্তুত করেন এবং তিনি রাতে সকল রাজকন্যাদের সাথে একসাথে বসে সেই খাবার খাবেন । সকল রাজকন্যারা তাদের নিজ নিজ রান্না করা খাবার নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন যুবরাজের জন্য, কিন্তু যুবরাজ আর আসলো না । তিনি একটি চিঠি মারফত জানালেন যে হঠাৎ অসুস্থতার কারনে তিনি আজকে উপস্থিত হতে পারছেন না, রাজকন্যারা যাতে সবাই মিলে রাতের কাবার খেয়ে নেয় । যুবরাজের এরকম আচরনে কয়েকজন রাজকন্যা খুবই অপমানিত বোধ করলেন । রাতটা কোন রকম কাটতেই আবারও ৫জন রাজকন্যা রাজপ্রাসাদ থেকে বিদায় নিলেন । 

যুবরাজ পরের দিন নিজে অনেক বড় করে সকল রাজকন্যাদের নিয়ে রাতের খাবার খেলেন । 

এরপর একদিন যুবরাজ সকল রাজকন্যাদের জন্য উপহার হিসাবে পোশাক পাঠালেন । পোশাক পেয়ে রাজকন্যারা খুশি হবেন তো দুরের কথা কেও কেও এমন রাগ করলেন যে, তা লিখে প্রকাশ করা যাবে না । কেও কেও তো বলেই ফেললেন যে, এমন  পোশাক তাদের দাসী-বাদিরাও পরেন না । এই রাগ সহ্য করতে না পেড়ে সকাল হতেই ৫ জন রাজকন্যা আবারও বিদায় নিলেন । 

পরের দিনই যুবরাজ রাজকন্যাদের এমন দামী দামী পোশাক উপহার পাঠালেন যে, সকল রাজকন্যা খুশি হয়ে গেলেন ।  

একদিন সকাল হতেই হঠাৎ করে কয়েকজন রাজকন্যা হইচই করতে লাগলেন যে তাদের কক্ষ থেকে মুল্যবান সকল গহনা চুরি হয়ে গিয়েছে এবং তারা যুবরাজকে দোষারোপ করে আরো ৫জন রাজকন্যা  রাজপ্রাসাদ থেকে বিদায় নিলেন এই বলে যে, যুবরাজ তাদের যথেষ্ট নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হয়েছে । আসলে যুবরাজ ইচ্ছা করে সকল রাজকন্যাদের কক্ষ থেকে নিজস্ব সৈনিক দ্বারা সকল মূল্যবান জিনিস সরিয়ে ফেলেছিলেন । 

এরপর তিনি সকল রাজকন্যাদের সকল মুল্যবান জিনিস ফেরত দিলেন এবং যে সকল রাজকন্যারা প্রাসাদ থেকে বিদায় নিয়েছিল তাদের মুল্যবান জিনিসপত্রও ফেরত পাঠালেন । 

খুব ভোরবেলা বাকি রাজকন্যাদের নিয়ে তিনি বেড়াতে বেড় হলেন এবং বেড়াতে বেড়াতে একটি বনের মধ্যে চলে গেলেন । বনে ঢুকতেই হঠাৎ বিকট শব্দে চারদিক থেকে বিশাল ডাকাত বাহিনী যুবরাজ এবং রাজকন্যাদের আটক করে বন্দী বানিয়ে ফেললো । রাজা অনেক অনুরোধ করার পর ডাকাত দল তাদের ছেড়ে দিতে রাজী হলেন তবে তার জন্য ডাকাত দলকে দিতে হবে ১০০০ স্বর্নমোহর । এখন কে রাজকোষ থেকে এই স্বর্নমোহর আনতে যাবে । যুবরাজ নিজে গিয়ে এই স্বর্নমোহর  এনে দিতে রাজি হলেন কিন্তু রাজকন্যারা কিছুতেই যুবরাজকে রাজ্যে ফিরে যেতে দিতে রাজি হলো না, কারন যুবরাজ যদি ফেরত না আসেন তখন তাদের কি হবে ?

এর মধ্যে থেকে একজন রাজকন্যা যুবরাজের কথায় আস্বস্ত হলেন এবং তিনি যুবরাজকে প্রাসাদে গিয়ে স্বর্নমোহর নিয়ে আসতে বললেন । যুবরাজ বাকি রাজকন্যাদের নিয়ে প্রাসাদে গেলেন এবং ১০০০ স্বর্নমোহর নিয়ে এসে রাজকন্যাকে ডাকাতদের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে প্রাসাদে গেলেন এবং সাথে সাথে ঘোষনা দিলেন যে এই রাজকন্যাই হলেন তার জন্য উপযুক্ত এবং তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব তাদের পিতা-মাতার কাছে প্রেরন করলেন । 

বাকি রাজকন্যারা সবাই বাড়িতে ফিরে গেলেন । 

রাজ্যের সকল প্রজাদের ৭দিন ব্যাপি দাওয়াত দিয়ে অনেক ধুম-ধাম করে যুবরাজের সাথে বিয়ে হলে । 

———————————————————********————————————————————



Leave a Reply