করোনা দুর্যোগে, উদ্যোক্তাদের ৫ করণীয় ।

বিশ্ব আজ করোনাভাইরাসের কারণে স্থবির। ভেঙে পড়ছে প্রতিটি দেশের অর্থনীতি। এর প্রভাব পড়ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। যার মধ্যে উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠানটিও বাদ যায়নি। আমরা এমন একটি কল্পনাতীত ক্রান্তিকাল পাড় করছি, যেটা কেউ কখনো চিন্তাও করেনি। ফলে আমরা এর ভয়াবহতা ও ক্ষতির ব্যাপকতা ইত্যাদি বিষয়ে এখনো অজানা। তাই এমন দুর্যোগে উদ্যোক্তাদের ৫ করণীয় সম্পর্কে জেনে নেই—

মেনে নেওয়া, মনে নেওয়া:  আমরা অনেকেই এ পরিস্থিতি মেনে নিতে পারছি না। ফলে এ সময়ে আমাদের কী করণীয় সে বিষয়ে বুঝে উঠতে পারছি না। এর জন্য প্রথমে বিষয়টি মেনে নিতে হবে। সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাফেরা করতে বলছেন, ঠিক সেভাবে চলাফেরা করতে হবে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসায় থাকলাম। কিন্তু মনটা পড়ে রইল বাইরে। এমনকি হতাশ হয়ে পড়লাম, কবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব? কবে আবার স্বাভাবিক হবে সব কিছু? আবার ব্যবসাটা শুরু করতো পারবো তো? তাহলে যতোই বাসায় থাকুন আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন না কেন। এ থেকে সামান্য উপকার পাবেন না। কারণ আপনি পরিস্থিতি মেনে নিয়েছেন। কিন্তু মন থেকে এখন পর্যন্ত মানিয়ে নিতে পারেননি। ফলে ধীরে ধীরে অসুস্থ হয়ে পরবেন। তাই আপনাকে মন থেকেও বিষয়টি মেনে নিতে হবে। তবেই স্বাভাবিক ও শান্ত থেকে চিন্তা করতে পারবেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় আপনাকে কী করতে হবে।
কাজ আগে না জীবন আগে: নিজেকে প্রশ্নটি করুন, উত্তর পেয়ে যাবেন। এ প্রশ্নের উত্তর একেক জনের জন্য একেক রকম। একেক জন মানুষের কাছে এ পরিস্থিতি একেকভাবে সমস্যা হয়ে সামনে এসেছে। তবে এটা খুব সহজেই বলা যায়, একজন মানুষের জীবনের সমতুল্য কিছু নেই। তবে বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন; সেটা যদি কাছে না থাকে, তাহলে বেঁচে থাকাটাও কঠিন হয়ে যায়। যদি কাজ করতেই হয়, তাহলে এমনভাবে করতে হবে। যাতে সেটা জীবনের ঝুঁকি হয়ে না দাঁড়ায়। কাজ করতে গিয়ে জীবন বিপন্ন হলে কাজ করবেন কীভাবে? তাই সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। যাতে আপনার জীবন ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে।
স্বপ্নের কাটাছেঁড়া: উদ্যোক্তাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান একটি স্বপ্ন। একেকজন উদ্যোক্তা তাদের পরিশ্রম, মেধা, শক্তি, সামর্থসহ সবটুকু দিয়ে স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু করেছিল। কিন্তু এখন এমন একটি সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছি, যেখানে স্বপ্নের বাস্তবায়ন তো দূরের কথা; স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখাটাই কঠিন। এ কারণেই উদ্যোক্তাদের স্বপ্নটাকে কিছুটা ছোট করে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যাতে আবার সময়-সুযোগ এলে স্বপ্নটাকে বড় করে বাস্তবায়ন করা যায়। স্বপ্ন বাস্তবায়নের সাথে যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো প্রতিষ্ঠানের বাজেট। এখন প্রতিটি টাকা আমাদের কাছে মহামূল্যবান এবং প্রয়োজনীয়। কারণ কবে নাগাদ আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবো, তার সঠিক দিনক্ষণ জানা নেই। তাই এখন শুধু সেই টাকাই খরচ করবেন, যা স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। তবে তার জন্য কর্মী ছাঁটাই করবেন না। কারণ এই কর্মী বা টিম মেম্বারই কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়নে এতদিন সহযোগিতা করেছে। এ দুর্যোগে তাদের পাশে থাকাও উদ্যোক্তার দায়িত্ব। এক্ষেত্রে তাদের সাথে বসে আর্থিক বিষয়গুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলুন। সবাই মিলে কাজ করলে স্বপ্নটি বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন।
ওয়ার্ক লাইক এ লিডার, নট লাইক এ বস: এখন যেসব প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে বা যেসব প্রতিষ্ঠান সামনে খুলবে; তাদের প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে একজন করে মানবিক লিডার দরকার। যার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হবে। কারণ এ সময়ে একজন কর্মীর বেতন, ভাতা বা আর্থিক সহযোগিতাই শুধু দরকার নয়। এর পাশাপাশি দরকার মানসিক সাহস ও সাপোর্ট। কারণ এ মহামারীর মধ্যে নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন বিপন্ন হতে পারে জেনেও আপনার কর্মী পাশে রয়েছে। একজন বস কাজটি করতে পারেন না, বিষয়টি এমন নয়। আমি তাদের বিপক্ষেও নই। তবে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস, একজন লিডারই তার নেতৃত্বের মাধ্যমে তার প্রতিষ্ঠানকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধি হয়ে যান: উদ্যোক্তার হাতে যদি টাকা না থাকে, পেটে ভাত না থাকে। তাহলে সে কারো কাছে কোন সহযোগিতাও চাইতে পারবে না। কারণ এ মুহূর্তে সবারই কমবেশি একই অবস্থা। এখন একটাই উপায়, সেটা হলো- জমানো টাকা থেকে খরচ করা। নিজের স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানটিতে বাঁচিয়ে রাখা। এখন কতজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার জমানো টাকা আছে? আর বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও ফুরিয়ে যায়। তাই প্রতিষ্ঠানকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সীমিত আকারে পণ্য বা সেবা বিক্রি শুরু করতে হবে। কিন্তু যখন পণ্য বা সেবা বিক্রির জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দেবেন, তখন অনেক সমালোচনা শুনতে হবে। তাই প্রথমেই কান দুটো বন্ধ করে নেবেন। যাতে সমালোচনাগুলো শুনতে বা দেখতে না হয়। এ ছাড়া কোন সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ক্রেতা, বন্ধু, শুভার্থীদের সাথে তর্কে জড়াবেন না। এতে আপনার মানসিক শক্তি কমে যেতে পারে। সবচেয়ে ভালো হয়, এ মুহূর্তে পণ্য বিক্রির জন্য পুশ সেল ও নেটওয়ার্কিং সেলের দিকে মনোযোগ দিন। অর্থাৎ বিপণনে যতটা সম্ভব কম টাকা ব্যয় করার দিকে মনোযোগী হতে হবে।

লেখক:
মো: আমিনুল ইসলাম,
ফাউন্ডার ও সিইও,
শাহিন’স হেল্পলাইন।



Leave a Reply