পণ্য বাজারজাতকরনে মার্কেটিং মিক্স (4P) এর ভুমিকা !

পণ্য বাজারজাতকরন হলো শৃঙ্খলার সাথে নিয়মিত এবং পর্যায়ক্রমে পরিবর্তনশীল একটি প্রক্রিয়া । আজ যে পণ্য বা কোম্পানী বাজারের শীর্ষ স্থান দখলকরে রেখেছে আগামীকাল হয়তো অন্য কোন পণ্য বা কোম্পানীর কাছে  তা হারাতে হতে পারে । তাই প্রতিনিয়ত পণ্য বাজারজাতকরনে নতুন নতুন কৌশল, নতুন নতুন উদ্ভাবন, নতুন নতুন পরিকল্পনার আশ্রয় নিতে হয় প্রতিটি কোম্পানীকে । উদাহরন হিসাবে বলা যায় যে, এক সময়ে পণ্য বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রে   “Marketing Mix 4P” নামে একটি মতবাদ সকলের কাছে সমানভাবে গ্রহণযোগ্য ছিল, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সময়ের পরিবর্তনের কারনে, পণ্য বাজারজাতকরনে নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন হবার কারনে পণ্য বাজারজাতকরনে এখন অনেকেই “ “Marketing Mix 4P” এর পরিধি বাড়িয়ে এখন  “Marketing Mix 7P”  নিয়ে আলোচনা করেন এবং এর ভিত্তিতে পণ্য বাজারজাত করে থাকেন ।
১৯৬০ সালে E. Jerome McCarthy “Marketing Mix 4P” মতবাদটি আলোচনা করেন । পণ্য বাজারজাতকরনে এটি একটি বহুল ব্যবহৃত মতবাদ । এই মতবাদে  E. Jerome McCarthy  চারটি উপাদান এর কথা বলেছেন । পণ্য বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রে অথবা পণ্যের নিজস্ব বাজার তৈরীর ক্ষেত্রে এই মতবাদের উপাদানগুলোকে যদি সঠিকভাবে সমন্বয় করে কাজে লাগানো যায়, তাহলে পণ্য বাজারজাতকরনের সম্ভাবনা অনেকাংশে বৃদ্ধি পায় ।
E. Jerome McCarthy তার “Marketing Mix 4P” মতবাদে যে চারটি উপাদান  এর কথা বলেছেন তাহলো:
  •      পণ্য     (Product)
  •      স্থান  (Place) 
  •      মূল্য  ( Price)
  •      প্রচার  (Promotion)
পণ্য  (Product ) :- 
পণ্য উৎপাদন এর পরিকল্পনার সময়েই খেয়াল রাখতে হবে যে, আমার/আমাদের উৎপাদিত পণ্যটি কতটুকু ক্রোতা/ভোক্তার   চাহিদা পুরন করতে সক্ষম হবে । পণ্য উৎপাদন পরিকল্পনার আগে অবশ্যই বাজারে ক্রোতা/ভোক্তাদের মাঝে কি পণ্যের চাহিদা রয়েছে তা জেনে নিতে হবে এবং ভেবে দেখতে হবে যে,
– উৎপাদিত যে পণ্যটি  দিয়ে ক্রোতা/ভোক্তাদের চাহিদা মেটানোর কথা ভাবছি সেই পণ্যটির মাঝে আদৌ সেই শক্তি/সামর্থ আছে কিনা ?
– বর্তমানে বাজারে যে সকল পণ্য পাওয়া যায়, সেই সকল পণ্যের চাইতে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের গুনগত মানের পার্থক্য কোথায় ?
– কেনই বা একজন ক্রোতা/ভোক্তা তাদের বর্তমান পছন্দের পণ্যটি বাদ দিয়ে আমাদের উৎপাদিত পণ্যটি কিনবেন ?
অবশ্যই এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর সামনে রেখে ক্রোতা/ভোক্তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে এমন পণ্য নিয়েই ব্যবসা তথা পণ্য বাজারজাতকরন শুরু করা প্রয়োজন ।   পণ্য যে ধরনেরই হোক না কেন, দৃশ্যমান  (Goods)  অথবা দৃশ্যমান নয়  (Service) পণ্য বাজারজাতকরনের কৌশল নির্ধারনের সময় অবশ্যই নিচের বিষয়গুলেকে গুরুত্ব দিতে হবে:
    আমরা কি পণ্য নিয়ে ক্রেতা/ভোক্তদের কাছে যাচ্ছি তা নির্ধারন করা ।
    পণ্যের একটি নামকরন (Brand) করা ।
    পণ্যের মোড়ক (Packaging) আকর্ষনীয়/নিশ্চিত করা ।
    পণ্যের গুনগত (Quality) মান নিশ্চিত করা ।
    পণ্যটি আকর্ষনীয় (Look) করে তৈরী করা ।
    পণ্য সম্পর্কিত তথ্যপত্র (Fixture) যথার্থভাবে উপস্থান করা ।
    পণ্য বিক্রির পর পণ্য স্থাপনে (Installation) সহযোগিতা করা ।
    পণ্যের বিক্রয়োত্তর সেবা (After Sales Service) নিশ্চিত  করা   ।
    পণ্যের  মান (Warranty/Guaranty) নিশ্চিত করা ।

স্থান  (Place) :- 
পণ্য ক্রেতা/ভোক্তার কাছে স্বল্প সময়ে, সঠিকভাবেপৌছে দিতে পণ্য বাজারজাতকরনের স্থান নির্ধারন অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ । দুইভাবে এটি চিন্তা করা যেতে পারে, ধরা যাক একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী একটি মাত্র দোকানের/ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার পণ্যসেবা তার ক্রোতা/ভোক্তার কাছে পৌছে দিতে চায় । সেক্ষেত্রে তার দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি এর জন্য এমন একটি জায়গায় নির্ধারন করতে হবে, যেখানে তার কাঙ্খিত ক্রোতা/ভোক্তারা  নিরাপদে সহজে আসতে পারেন এবং যেখানকার যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল এবং নিরাপদ । আবার ধরা যাক কোন বড় ব্যবসায়ী/উৎপাদনকারী সাড়া বাংলাদেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা তাদের ক্রেতা/ভোক্তাদের কাছে তাদের পণ্য পৌছে দিতে চায় । সারাদেশে ছোট -বড় সরবরাহকারীর মাধ্যমে সেই প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্য পৌছে দিতে পারেন,সেক্ষেত্রেও সরবরাহকারী এবং গোডাউনগুলো এমন জায়গায় নির্ধারন করতে হবে, যেখানের যাতায়াত ব্যবস্থা ভাল, কম খরচে, কম সময়ে নিরাপদে পৌছানো যায় ।
পণ্য বাজারজাতকরনের স্থান নির্ধারনের সময় অবশ্যই  নিচের বিষয়গুলেকে গুরুত্ব দিতে হবে:
    পণ্য কোথা থেকেক্রোতা/ভোক্তার কাছে পৌছানো হবে সেই স্থান (Place) নির্ধারন করা ।
    পণ্য বাজারজাতকরনের জন্য কি এবং কোন ধরনের পরিবহন/ব্যবস্থা (Distribution Channel) গ্রহন করা হবে তা আগে থেকেই নির্ধারন করা ।
    পণ্য বাজারজাতকরনের জন্য পরিবহন ছাড়াও অন্যান্য যে সকল সহযোগিতা (Logistic) প্রয়োজন হতে পারে তা আগেথেকেই নিশ্চিত করা ।
    পণ্য বাজারজাতকরনের পুর্বেই কিভাবেকোথায়কোথায় পণ্য, টাকা, ও অন্যন্য  হিসাব সংরক্ষন (Record Keeping) করা কবে তা নির্ধারন করা ।
    কে, কিভাবে,কোথা থেকে পণ্যের চাহিদা পাঠানো হবে (Order Processing) তা আগে থেকে নির্ধারন করে রাখা । বর্তমানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সমুহ ইন্টারনেট/মোবাইল/বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গা থেকে কেন্দ্রে পণ্যের চাহিদা পাঠিয়ে থাকে । সম্ভব হলে পণ্যের চাহিদা প্রেরন এর জন্য এ রকম ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা  ।
    পণ্যের বাজারের পরিধি কতটুকু হবে (Market Coverage) এর সিদ্ধান্ত গ্রহন একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। উৎপাদিত পণ্য দ্বারা কতটুকু পরিধি নিয়ে পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব তা আগে থেকেই ঠিক করতে হবে । পণ্যের বাজারের পরিধি অনুযায়ী পণ্য বাজারজাতকরনের অন্যান্য  সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা ।
    পণ্য বাজারজাত করনের জন্য কোম্পানীর সার্থ সংরক্ষন করতে পারে এ রকম সরবরাহকারী, খুচরা বিক্রেতা (Distributors) বাছাই করা ।
মূল্য  (Price) :- 
আমাদের দেশেরক্রেতা/ভোক্তারা মোটামোটি দুটি ভাগে বিভক্ত এক ভাগ ক্রেতা/ভোক্তা পণ্যের গুনগত মান বাদ দিয়ে কম দামে পণ্য কিনতে চান । আরেকদল ক্রেতা/ভোক্তা রয়েছে যারা পণ্যের মূল্য একটু বেশি হলেও গুনগত মান সম্পুর্ন পণ্য কিনতে আগ্রহী । আর সকলক্রেতা/ভোক্তাই স্বল্প দামে গুনগত মান সম্পুর্ণ পণ্য কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে ।  পণ্যের মূল্য নির্ধারন তাই একটি জটিল কাজ, যার উপরে পণ্যের সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে । পণ্য বাজারজাতকরনের আগেই পণ্যের মূল্য নির্ধারনের কৌশল  নির্ধারন করা উচিৎ অর্থাৎ কোন কৌশল অনুসরন করে আমরা পণ্যের মূল্য নির্ধারন করবো ।
পণ্যের মূল্য নির্ধারনের সময় কোনকোস্পানি অল্প পণ্যথেকেই অধিক লাভ করতে চায় আবারকোনকোম্পানি অধিক পণ্য বিক্রি করে  বাজারজাতকরনের সময় খেয়াল রাখতে হবে:
    পণ্য নির্ধারনের  কৌশল কি হবে তা আগেথেকেই ঠিক করে রাখতে হবে । একটিকোম্পানিতে যদি একাধিক পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হয় তাহলে সেক্ষেত্রে  প্রতিটি পণ্য বাজারজাত করনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা উচিৎ, কারন প্রতিটি পণ্য বাজারের একই অবস্থানে বা পর্যায়ে অবস্থান করে না । কোন পণ্যের প্রতিযোগী পণ্য বেশি আবার কোন পণ্যের প্রতিযোগি পণ্য কম, আবার কোন পণ্যের চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধি পায় আবার কোন পণ্যের চাহিদা স্থির থাকে বা কমে যায় ।  প্রত্যেকটি পণ্য বাজারজাত করনের আগেই পণ্যের সম্ভাব্যতা যাচাই করে পণ্যের মূল্য নির্ধারনের কৌশল ঠিক করা ।
    পণ্য বাজারজাতকরনের পুর্বেই, পণ্যের মূল্য তালিকা তৈরী করা এবং পণ্যের মূল্য তালিকা অনুযায়ী যাতে পণ্য বাজারে বিক্রয় করা হয় সে বিষয়টি নিশ্চিত করা । অনেক সময় দেখা যায় যে, খুচরা বিক্রেতারা অধিক লাভের আশায় পণ্যের মূল্য তালিকার চেয়ে অধিক মুল্যে পণ্য বিক্রয় করছে । একই পণ্য যদি একই বাজারে একাধিক মুল্যে বিক্রয় করা হয় তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সেই পণ্যটি এবংসেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ক্রেতা/ভোক্তোদের  আস্থার অভাব তৈরী হয় যা ব্যবসার জন্য হুমকি স্বরুপ। তাই পণ্য তালিকা অনুযায়ী পণ্য বিক্রয় নিশ্চিত করা ।
ক্রোতা/ভোক্তা, খুচরা বিক্রেতা, সরবরাহকারী ইত্যাদি পর্যায়ের সুবিধাভোগীরা (ব্যবসা বাজারজাতকরনের সাথে যুক্ত) কিভাবে আপনার পণ্যের মূল্য পরিশোধ করবে তা আগে থেকেই নির্ধারন করে রাখতে হবে । শুধু মুল্য পরিশোধ এর নিয়মই নয় সময়ও আগে থেকেই নির্ধারন করে রাখতে হবে অন্যথায় বাজারে অনেক টাকা বাকী পড়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরী হতে পারে। পণ্য বাজারজাতকরনের সাথে জড়িত সুবিধাভোগী বান্ধব একটি আর্থিক লেনদেন প্রক্রিয়া আগে থেকেই ঠিক করা ।
    অনেক সময় পণ্য বাজারজাতকরন, প্রচার,ক্রোতা/বিক্রেতার আস্থা অর্জন ইত্যাদি কারনে  মূল্য হ্রাস দিয়ে পণ্য বাজারজাত করতে হয় । পণ্য মূল্য হ্রাস দিয়ে পণ্য বাজারজাতকরনের ক্ষেত্রেও একটি সঠিক পরিকল্পনা করে তারপর পণ্যের মূল্য হ্রাসদেয়া উচিৎ । কতটি পণ্যে মূল্য হ্রাসদেয়া হবে, কতদিন মূল্য হ্রাস চলবে ইত্যাদি বিষয়গুলো নির্ধারন করে তারপর মূল্য হ্রাস দিয়ে পণ্য বাজারজাত করা ।
    অনেক সময়দেখা যায়যে, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাকি বা পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধ এই নিয়মেও পণ্য বাজারজাত করে থাকে । এক্ষেত্রে সঠিক পরিকল্পনা এবং নিয়মনীতির মধ্যে দিয়ে পণ্য বাজারজাত করা ।
প্রচার  (Promotion) :- 
“প্রচারেই প্রসার” –  ব্যবসার সাথে জড়িত অথচ এ কথাটি বিশ্বাস করেন না, এমন ব্যবসায়ী খুজে পাওয়া মুস্কিল । সময়ের সাথে সাথে পণ্য বাজারজাত করনের কৌশলে যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে পণ্যের প্রচারের ক্ষেত্রেও । বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যম পন্থা অবলম্বন করে কাঙ্খিত ক্রেতা/ভোক্তার কাছে পৌছে দেয়া হচ্ছে  কাঙ্খিত পণ্য সর্ম্পকিত বার্তা । পণ্যের প্রচারের জন্য ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন করার জন্য পণ্যের বিজ্ঞাপন, সরাসরি পণ্য বিক্রয়, ব্যক্তিগতভাবে পণ্য বিক্রয়সহ নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করে থাকে । বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করছে ক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন করার জন্য।
পণ্য প্রচারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় অবশ্যই নিচের বিষয়গুলেকে গুরুত্ব দিতে হবে:
    বিজ্ঞাপন (Advertisement) :–  পণ্যের জন্য কাঙ্খিত ক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন এর জন্য পণ্যের গুনাবলী, তথ্য, ছবি সম্বলিত বিজ্ঞাপন দেয়া অত্যান্ত পুরনো এবং জনপ্রিয় একটি কৌশল । পণ্যের বিজ্ঞাপন দেয়ার জন্য এক সময় ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশিরভাগই বিলবোর্ড,পোষ্টার,দেয়াল লিখন, ইত্যাদি মাধ্যম ব্যবহার করে থাকতো, কিন্তু বর্তমানে এগুলোর পাশাপাশি ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া একটি বড় জায়গা দখল করে রেখেছে । পৃথিবী বিশ্বায়নের কারনে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়া ব্যবহারের পরিধি যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি ক্রোতা/ভোক্তা দখলে ইলেক্ট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যবসায়ীদের পণ্যের বিজ্ঞাপন দেবার  প্রতিযোগীতাও বৃদ্ধি পেয়েছে  । কোন মাধ্যমে আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন দিবেন তার সিদ্ধান্ত গ্রহনের পুর্বে আপনার পণ্যের কাঙ্খিত ক্রেতা/ভোক্তা, বাজেট, স্থান, সময়, বিবেচনা করে বিজ্ঞাপন দেবার সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন ।
একটি নতুন কোম্পানি টেলিভিশন  বাজারজাত করে, তারা স্দ্ধিান্ত নিলো যে,টেলিভিশনটির ক্রেতা/ভোক্তা বৃদ্ধির জন্য টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দিবেন, তারা বিজ্ঞাপন দেবার জন্য একটি নিউজচ্যানেলকে বেছে নিলো এবং সময় নির্ধারন করলো প্রতিদিন দুপুর ১২ টা । আমাদের দেশে সাধারনত নিউজচ্যানেল গুলোর দর্শক বিনোদন নির্ভর টিভি চ্যানেল এর চেয়ে তুলনামুলক কম এবং দুপুর ১২টা হলো একদম ব্যাস্ত একটি সময়, এ সময় বেশিরভাগ মানুষই নিজ নিজ কাজে ব্যাস্ত থাকে, রাতের (বিনোদন সময়) চেয়ে দুপুর ১২ টায় টিভি দর্শকও থাকে তুলনামুলক অনেক কম । স্বাভাবিকভাগেই এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি তাদের কাঙ্খিত ক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন করতে ব্যর্থ হবেন বলে ধারনা করা যায় ।
     বার্তা প্রেরন (Massage) : পণ্য সম্পর্কিত বার্তা প্রেরন ধিরে ধিরে একটি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসাবে পরিচিতি লাভ করছে । বিশেষ করে ই-মেইল, এসএমএস, ইত্যাদি মাধ্যমগুলো বিগত কয়েক বছরে বেশ  জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে । এই মাধ্যমের একটি বিশেষ সুবিধার দিক হলো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো তার কাঙ্খিত ক্রেতা /ভোক্তাকে লক্ষ্য করে সরাসরি তার পণ্যে সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারেন এবং অন্য মাধ্যমের চেয়ে খরচও তুলনামুলক অনেক কম । এই মাধ্যম এর জনপ্রিয়তার উপর ভিত্তি করে বর্তমানে এ দেশে বেশ কিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে যারা সাফল্যের সাথে এ সম্পর্কিত সেবা দিয়ে যাচ্ছে ।
    পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধি (Sales Promotion) : পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্যের প্রসার এবং প্রচার বহুল ব্যবহৃত একটি মাধ্যম । পণ্যের ক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন করার জন্য আলাদা কোন প্রচার এর ব্যবস্থা না করে পণ্যটি ক্রেতা /ভোক্তার কাছে পৌছে দেয়াই এই মাধ্যম এর সবচেয়ে বড় কৌশল । এই কৌশলটি পুরনো কোম্পানী বা পণ্যের জন্য যতটা সহজ, নতুন একটি কোম্পানী বা পণ্যের জন্য ততটা সহজ নয় ।  পণ্য বিক্রয় বৃদ্ধিও জন্য কোম্পানীগুলো তাদের পণ্যের মূল্য হ্রাস, নানাবিধ উপহার, একটি পণ্যের সাথে অন্য আরেকটি পণ্য ফ্রি, সহ নানারকম কৌশল অবলম্বন করে থাকে । এই কৌশল এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাকে তার পণ্যটি ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্যের গুনগত মান সম্পর্কে অবহিত করা ।
    ব্যাক্তিগতভাবে বিক্রয় (Personal Selling ) : নিজেদের পণ্যটি সরাসরি ক্রেতা /ভোক্তার কাছে ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানির প্রতিনিধির মাধ্যমে পণ্য বিক্রয় করাই  হলো এই মাধ্যমের উদ্দেশ্য । ক্রেতা/ভোক্তা পণ্যের কাছে নয় পণ্য ক্রেতা/ভোক্তার কাছে পৌছে যাবে এই উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই অনেক ব্যবসায়ী তাদের পণ্য প্রচারের জন্য এই মাধ্যম ব্যবহার করে থাকেন । তবে পণ্যের আকার, ধরন, মূল্য ইতাদি অনেক সময় এই মাধ্যম ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়ায় ।
    তথ্য প্রযুক্তি (Digital Technology): বর্তমানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্যের প্রচারের জন্য অন্য যেকোন মাধ্যমই ব্যবহার করুক না কেন, তথ্য প্রযুক্তি খাতে পণ্য তথা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতি থাকতে হবে এটা প্রায় নিয়মই হয়ে দাড়িয়েছে । ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো তাই নিজেদের ওয়েব সাইট, এবং অন্যান্য জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম (যেমন: ফেইজবুক, টুইটার, লিংকেডিন ইত্যাদি) এ তাদের পণ্য প্রচারে সচেষ্ট রয়েছে, শুধু প্রচার নয় পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও এই মাধ্যমগুলো ভুমিকা রেখে চলেছে ।
    তহবিল ( Budget) : পণ্য প্রচারের জন্য তহবিল অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপুর্ণ আপনি কোন মাধ্যমে, কত তহবিল খরচ করে আপনার পণ্যের প্রচারের কাজটি করবেন এবং তার বিপরীতে আপনি কতজন ক্রেতা/ভোক্তাকে আকর্ষন করতে পারবেন সেই বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা । পণ্য প্রচারের জন্য কখনোই অণ্যকে অনুসরন না করে আপনার পণ্যেও জন্য, ব্যবসার জন্য লাভজনক এমন একটি মাধ্যমকে বেছে নেয়াই  পবুদ্ধিমানের কাজ হবে । মনে রাখতে হবে আপনি যতো টাকা/তহবিল পণ্যের প্রচারের জন্য খরচ করবেন তার প্রভাব কিন্তুু আপনার পণ্যের মুল্য তথা ব্যবসার উপর পড়বে ।তাই ভেবে চিন্তে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন ।
    অন্যান্য (Others): পণ্যের ধরন, আকার, স্থান, সময় ইত্যাদি মাথায়রেখে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানটি তাদের পণ্য প্রচারের জন্য নানারকম নতুন নতুনকৌশল অবলম্বন করতে পারেন । পণ্য প্রচারের কৌশল যতো নতুন হবে ক্রেতা/ভোক্তা আকর্ষন এর সম্ভবনাও ততো বৃদ্ধি পাবে ।
পরবর্তীতে সেভেন পি (7P) নিয়ে আলোচনা করার আশা রইলো


Leave a Reply