এখনই সময়, উদ্যোক্তাদের ঘুড়ে দাড়াবার !

এখনই সময় উদ্যোক্তাদের ঘুরে দাঁড়াবার!
করোনা দুর্যোগের কারণে সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও উদ্যোক্তারা নানাভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। শুরুর দিকে বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে পণ্য বা সেবার সার্বিক সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও মে-জুন মাস থেকে উদ্যোক্তারা আবার ঘুরে দাঁড়াবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। এখনো সার্বিক চ্যালেন্জ মোকাবেলায়, নানাবিধ কৌশল ও বুদ্ধিমত্তা অবলম্বন করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়াবার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যে সকল উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর যুদ্ধে তাদের অদম্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন তাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন আর যারা নতুন করে ব্যবসায় নামার কথা ভাবছেন তাদের প্রতি আহবান থাকবে বিলম্ব না করে যত দ্রুত সম্ভব শুরু করুন কেননা সময়ের পরিক্রমায় সামগ্রিক পরিস্থিতি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে উঠবে,হয়ে উঠবে ভাবনাতীত জটিল ও দুর্বোধ্য।
ব্যবসার বর্তমান অবস্থা যাচাই করুন:
অনেকদিন পর যেহেতু আপনি আবারও নতুন করে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছেন, তাই পুনরায় শুরু করার আগে আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থাটা ভাল করে যাচাই বাছাই করে নেয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে কিছু প্রশ্ন যেমন: আপনার প্রতিষ্ঠানে কি পরিমাণ তুলনামূলক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বা করোনার প্রভাব কি হারে পড়েছে? বাজারে আপনার পণ্যের চাহিদা আগের মতো আছে কি নেই? আপনার সহকর্মীগণ সবাই সুস্থ আছেন কি নেই? বাজারে পুনরায় পণ্য সরবরাহ করার জন্য আপনার প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত আছে কি নেই? এসব বিষয়গুলো সার্বিক বিবেচনা করে, আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা এবং অবস্থান ভাল করে বুঝে যথাযথ কৌশল নির্ধারণপূর্বক নতুন করে শুরু করুন।
পণ্যের বর্তমান চাহিদা যাচাই করুন:
করোনার কারণে আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম যখন সাময়িক বন্ধ করতে হয়েছিল তখন আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্যের চাহিদা যে রকম ছিল এখনও বাজারে আপনার পণ্যের চাহিদা সেই পরিমাণ আছে কিনা এই সম্পর্কিত তথ্য আপনার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় কারণ করোনা দুর্যোগের কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে যেমন নানাবিধ পরিবর্তন এসেছে ঠিক তেমনি ক্রেতারাও তাদের চাহিদার পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছেন। তাই আপনি যদি তুলনামূলক যাচাই-বাছাই ছাড়াই, বাজার চাহিদা নিরুপণ না করে পূর্বের মতো পণ্য উৎপাদন করতে থাকেন তাহলে পণ্যের উৎপাদন হয় বেশি হয়ে যাবে নয়তো কম, যদি আপনি বেশি পরিমাণে পণ্য উৎপাদন করেন তাহলে আপনার বিনিয়োগ আটকে থাকবে আবার যদি পণ্য কম উৎপাদন করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবেই চাহিদা মেটাতে ক্রেতারা অন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য ক্রয় করবেন। এক কথায়, এই দুর্যোগকালীন পর্যাপ্ত যাচাই-বাচাইহীন পণ্য উৎপাদন আপনাকে নতুন করে বিপদে ফেলে দেবার জন্য যথেষ্ট।
আর্থিক অবস্থা যাচাই করুন:
দুর্যোগকালীন আপনার প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক লেনদেনের পরিস্থিতি বাধাগ্রস্ত হয়েছে তাই এটা ধরে নেয়া যায় যে আপনার প্রতিষ্ঠান কিছুটা হলেও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কারণ লেনদেন মানেই হচ্ছে কেনা-বেচা, আর কেনা-বেচা মানেই হচ্ছে লাভ-ক্ষতি আর লাভ-ক্ষতি মানেই আপনার প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়া। তাই পুনরায় শুরু করার ক্ষেত্রে আপনার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান আর্থিক সক্ষমতাটা যাচাই করে নিতে হবে আর সেজন্য অবশ্যই নতুন করে একটি বাজেট প্রণয়ন করতে হবে অথবা আগের বাজেটটি পরিমার্জন-সংশোধন করে নিতে হবে কেননা করোনা পূর্ববর্তী বাজেটটি করোনাকালীন পরিস্থিতি মাথায় রেখে করা হয় নি। আবার অন্যদিকে আপনার প্রতিষ্ঠান ক্ষতির সম্মুখীন হলে আপনাকে নতুন করে চলতি মূলধন জোগাড় করতে হতে পারে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে তারল্য সংকটসহ অর্থনৈতিক ঝুঁকি এড়িয়ে নির্বিঘ্নে প্রতিষ্ঠান চালাতে বারংবার প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক অবস্থা যাচাই করতে হবে।
নতুন করে পরিকল্পনা তৈরি করুন:
করোনা দুর্যোগের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায় অনেক পরিবর্তন এসেছে তাই আপনি আগে যে কৌশল অবলম্বন করে আপনার পণ্য বিক্রি করতেন সেটি হয়তো আর এখন ফলপ্রসু হবে না। তাই নতুন করে অবশ্যই আপনাকে পণ্য বিক্রির জন্য কৌশল নির্ধারণ করতে হবে, যা হবে বাস্তবসম্মত, বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং বাজারের চাহিদা-যোগানকে কেন্দ্র করে। আপনি যত দ্রুত করোনা পরবর্তী সময়ের নিউ নরমাল (New Normal) চাহিদার সাথে নিজের প্রতিষ্ঠান এবং আপনার পণ্যকে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন তত আপনার সফলতার হার বৃদ্ধি পাবে।
নতুন করে পণ্যের বহুমুখীকরণ:
করোনা পরবর্তী সময়ে জীবনযাত্রার পরিবর্তনের পাশাপাশি বাজারের চাহিদা-যোগানের তারতম্যের কারণে স্বাভাবিকভাবেই পণ্যের বাজারে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এতে করে পূর্বের বহুল প্রচলিত পণ্যটির চাহিদা হয়তো এখন অনেক কমে এসেছে, আবার কিছু কিছু পণ্যের চাহিদা পূর্বের তুলনায় অনেক বেড়েছে। সঙ্গতকারণেই বাজারের চাহিদা-যোগানের তাল মিলিয়ে পণ্যের বহুমুখীকরণের প্রশ্ন চলে আসে। এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, নতুন পণ্যের চাহিদা থাকলেও নতুন করে নতুন ধরণের ব্যবসা শুরু করার চেয়ে আপনি যতবেশি পণ্যের বহুমুখীকরণ করতে পারবেন ততবেশি আপনি স্বল্প বিনিয়োগে সফল হতে পারবেন কেননা নতুন একটি ব্যবসা তৈরি করা মানেই নতুন একটি সাপ্লাই চেইন তৈরি করা যেটি সময়ের প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট কষ্টসাধ্য তাই আপনি যদি আপনার বর্তমান (Existing) সাপ্লাই চেইন ব্যবহার করে পণ্যের বহুমুখীকরণ নিশ্চিত করুন।
পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে মিল রেখে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করুন:
আগে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হতো এখন কিন্তু সেই সব বিষয়ের পাশাপাশি অনেক নতুন বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কারণ এখনকার পরিবেশটি আগের মতো নেই। এখন বিভিন্ন বিষয় যেমন আপনাকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অফিস পরিচালনা করতে হবে, কর্মীদের মানসিক শক্তি বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে, অফিসে সহকর্মীদের মাঝে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, প্রয়োজনে বাসায় থেকে অফিস করার সুযোগ রাখতে হবে, অনলাইনে মিটিং সভা-সেমিনার করতে হতে পারে, পণ্য বিক্রির জন্য অনলাইনে উপস্থিতি বাড়াতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে জানতে হবে এবং তার যথোপযুক্ত প্রয়োগ করতে হবে। অন্যথায় আপনি ও আপনার প্রতিষ্ঠান পিছিয়ে পড়বে।
সব সময় নতুন তথ্য সংগ্রহ করুন:
এখন সারা বিশ্বে খুব দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে তথ্য ও প্রযুক্তি। তাই পণ্য ও আপনার ব্যবসায়িক সেক্টরভিত্তিক আপডেটেড তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে যাতে করে আপনি আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের পণ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ সম্পর্কিত যাবতীয় কৌশল তৈরী করতে পারেন। আমরা সকলেই জানি, আপডেটেড তথ্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ধরে রাখতে ও দৃঢ় করতে নিঃস্বন্দেহে অপরিহার্য।
লেখক
মো: আমিনুল ইসলাম
প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও
শাহিন’স হেল্পলাইন