উদ্যোক্তা যখন একজন নেতা !

একটা বিষয়ে মাঝে মাঝেই অনেকের মধ্যে দ্বিমত দেখা যায় । বিষয়টি হলে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের কর্মীবাহিনী প্রয়োজন ? দক্ষ কর্মীবাহিনী নাকী বিস্বত্ব কর্মীবাহিনী ? এ বিষয়ে কোনটিকে আপনি অগ্রাধিকার দিবেন ? কেনই বা অগ্রাধীকার দিবেন ।
একজন দক্ষ কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতীতে ভুমিকা রাখতে পারবে  এ  বিষয়ে কোন দ্বিমত করার সুযোগত নেই । কিন্তু সেই দক্ষ কর্মীটিই যদি সৎ না হয়, তাহলে কি আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতী বাধার  সম্মুখিন হবে না ?
আবার একজন বিস্বত্ব কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানকে হয়তো কোন ক্ষতির সম্মুখিন করবে না, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের যে  অগ্রগতী সেই অগ্রগতীতে যদি ভুমিকা রাখতে না পারে তাহলে সেই কর্মী কি আপনার প্রতিষ্ঠানের কাছে এক সময় বোঝা হয়ে যাবে না ? বা আপনার প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতীর বাধা হিসাবে বিবেচিত হবে না ?
তাহলে আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের কর্মী বাছাই করবো বা কোন ধরনের কর্মীকে অগ্রাধীকার দিয়ে নিয়োগ দিবো ? এই প্রশ্নের উত্তর খোজা আর মরুভুমীতে পানি খোজার মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য আছে  কি ? মনে হয় নেই। কারন এই প্রশ্নের উত্তর একেক জনের কাছে  একেক রকম । কেও হয়তো বলবে দক্ষকর্মী আবার কেও হয়তো বলবে বিস্বত্বকর্মী ।
আসলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের কাজ যেমন ভিন্ন, ঠিক তেমনি প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান বা যার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়, তিনিও কিন্তু ভিন্ন । ফলে  একেকজনের নেতৃত্ব প্রদানের গুনাবলী, নেতৃত্বের ধরন, নেতৃত্বের চাহিদা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে ।
একটি প্রতিষ্ঠান সঠিক সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য সঠিক নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই ।
জিনতত্ত্ববিদের এলান কিথ এর মতে  “নেতৃত্ব হল মানুষের জন্য একটি পথ খুলে দেওয়া যাতে তারা কোনও অসাধারণ ঘটনা ঘটানোর ক্ষেত্রে নিজেদের অবদান রাখতে পারে।”
সহজভাবে যদি ‘এলান কিথ’ এর কথাটি বলি তাহলে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য  তিনিই হলেন সঠিক একজন নেতা যিনি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এমন একটি পরিবেশ তৈরী করবেন যেখানে একজন দক্ষ কর্মী চাইলেই অসৎ হতে পারবে না বা একজন বিস্বত্ব কর্মী নিজে নিজেই পরিবেশগত কারনে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলবেন এবং উভয়ই প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতীতে ভুমিকা রাখবেন ।
নেতৃত্বের বিভিন্ন ধরন প্রচলিত আছে  একেকজন নেতার নেতৃত্বের ধরন একেক রকম হয় । যেমন : একনায়কত্ব, স্বৈরাচারী , অংশগ্রহণকারী, অবাধ-স্বাধীনতা প্রদানকারী ইত্যাদি ইত্যাদি ।
কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য কি ধরনের নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে সেটা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠানের কাজের উপর । তবে প্রতিষ্ঠানের কাজ যে ধরনেরই হোক না কেন কিছু বিষয়ে সব প্রতিষ্ঠানের নেতা  কেই খেয়াল রাখতে হবে আর এর মধ্যে অন্যতম হলো : প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মীদের মধ্যে এমন একটি দলীয় উদ্দীপনা তৈরী করা যাতে করে সবাই সেই প্রতিষ্ঠানকে নিজের বলে মনে করে এবং দলীয় উদ্দীপনার মাঝে দক্ষ – অদক্ষ, সৎ-অসৎ সবাই মিলে প্রতিষ্ঠানের অগ্রগতীর জন্য কাজ করবে ।
www.bn.wikipedia.org তে একটি প্রতিষ্ঠানের দলীয় বৈশিষ্ট্য কি ধরনের হতে পারে সে বিষয়ে চমৎকারভাবে বলা আছে ।
দলের সব সদস্য একতার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। আন্তঃব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকতেই হবে। সদস্যদের নিজেদের অবদান রাখা, অন্যের কাছ থেকে সেখা এবং অন্যদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকা অবশ্য প্রয়োজন। একটি সাধারণ লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য অদস্যদের একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা থাকতেই হবে। উন্নত ক্রিয়াশীল দলের দশটি বৈশিষ্ট্য:
  • অভিপ্রায়: দলের অস্তিত্ব কেন আছে, সে বিষয়ে সদস্যদের মধ্যে একটি গর্ববোধ থাকে এবং তাঁরা দলের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে পৌঁছনোর ব্যাপারে নিবেদিত।
  • অগ্রাধিকার: এর পর কী করতে হবে, তা কে করবেন, এবং কোন সময়ের মধ্যে দলের লক্ষ্যে উপনীত হতে হবে তা সদস্যেরা জানেন।
  • ভূমিকা: কাজ নিষ্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাঁদের ভূমিকা কী, সদস্যের তা জানেন, এবং কখন আরও দক্ষ একজন সদস্যকে একটি বিশেষ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে, সে সম্পর্কেও তাঁরা অবগত।
  • সিদ্ধান্ত: কর্তৃত্ব এবং সিদ্ধান্ত-গ্রহণের সীমা সম্পর্কে স্পষ্ট বোধ।
  • বিরোধ: সমস্ত বিরোধের মোকাবিলা খোলাখুলিভাবে করা হয়, এবং সিদ্ধান্ত-গ্রহণ ও ব্যক্তিগত বিকাশের ক্ষেত্রে তাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
  • ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য: সদস্যের মনে করেন তাঁদের অভিনব ব্যক্তিত্বকে প্রশংসা করা হয় এবং তার সদ্ব্যবহার করা হয়।
  • বিধি: একসঙ্গে কাজ করার ক্ষেত্রে দলীয় বিধি স্থির করা হয় এবং দলের প্রত্যেকের জন্য তা মান হিসেবে দেখা হয়।
  • কার্যকারিতা: সদস্যের দলীয় বৈঠককে দক্ষ ও উত্পাদনশীল বলে মনে করেন এবং একত্রিত হওয়ার এই সময়টুকুর জন্য প্রতিক্ষা করেন।
  • সাফল্য: দল কখন সফল হয়েছে, তা সদস্যের স্পষ্টভাবে জানেন এবং তা সবার সঙ্গে সমানভাবে ও গর্বের সঙ্গে ভাগ করে নেন।
  • প্রশিক্ষণ: সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য প্রদানের সুবিধা এবং দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এবং দলের সদস্যেরা সেই সুবিধা নেন।
এখন আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে ,কখন, কিভা
বে , কি কৌশলে, আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানকে নেতৃত্ব প্রদান করবো ।


Leave a Reply