একজন উদ্যোক্তার চোখে CMSME আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ।

 
একজন উদ্যোক্তার চোখে CMSME আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ।
 
নভেল করোনা ভাইরাস (COVID-19) এর প্রাদুর্ভাবের কারনে ক্ষতিগ্রস্থ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের (CMSME) সক্ষমতা ধরে রাখতে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান ধরে রাখতে ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তাদের জন্য বিগত ৫ এপ্রিল ২০২০মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ২০ ( বিশ) হাজার কোটি টাকার আর্থিক 
সহযোগীতা প্যাকেজ ঘোষনা করেন । 
 
এই ঘোষনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩ এপ্রিল ২০২০ একটি সার্কুলার জারী করেন এবং ৩০ এপ্রিল ২০২০ বাংলাদেশ ব্যাংক উক্ত (১৩ এপ্রিল ২০২০) সার্কুলার সংশ্লিষ্ট আরো একটি সার্কুলার জারী করেন । 
 
এই বিশেষ ঋন/বিনিয়োগ এর সার্কুলার এ কিছু বিষয়ে চ্যালেন্জ থাকলেও  এটাকে আমার কাছে অনেক উদ্যোক্তা বান্ধব মনে হয়েছে । যেমন : প্রতিটি ব্যাংক এ একটি করে হেল্প ডেস্ক এর কথা বলা হয়েছে যাতে করে যে কোন উদ্যোক্তা এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, উদ্যোক্তা নির্বাচন, ঋন/বিনিয়োগ বিতরন, তদারকী ও আদায় সংক্রান্ত কাজে FBCCI বা এর চেম্বার/এসোসিয়েশন সমুহের সহায়তা গ্রহন করবে শুধু তাই নয় ঋণ/বিনিয়োগ অর্থায়নে সহায়ক জামানত হিসাবে ব্যাক্তিগত, সামাজিক ও গ্রুপ গ্যারান্টি গ্রহন করা যাবে ।
 
 তবে কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোক্তাগনকে ঋন/বিনিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে চেম্বার/এসোসিয়েশনগুলোকে একটি বিশেষ মেম্বারসিপ এর আওতায় আনা প্রয়োজন যাতে করে কারো আগে মেম্বারসিপ না থাকলেও বর্তমানে নতুন করে মেম্বার হতে পারেন জরূরী ভিত্তিতে । 
 
 নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৫% ঋন/বিনিয়োগ বরাদ্ধ রাখা হয়েছে ( আমার ব্যাক্তিগত অভিমত  এই ৫% বাড়িয়ে ১০-১৫% করা প্রয়োজন ) । এছাড়া যে সকল নারী উদ্যোক্তা সংশ্লিষ্ট চেম্বার / এসোসিয়েশন রয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের ঋন/বিনিয়োগ সংগ্রহে তাদের বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে যাতে করে তারা সহজেই এই ঋন/বিনিয়োগ পেতে পারেন । কারন এই ঋন/বিনিয়োগ প্রদান এর ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং সেবাগ্রহীতার সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে । আমাদের দেশের নারী উদ্যোক্তারা এক অজানা কারনেই কেন জানি ব্যাংকমুখী নন বলে আমার ধারনা তাই এ ক্ষেত্রে চেম্বার/এসোসিয়েশনগুলোকে বিশেষ ভুমিকা রাখতে হবে । 
 
প্রতিটি ব্যাংক এর বাৎসরিক ঋন/বিনিয়োগের ১৫ শতাংশ গ্রাম অন্জলে প্রদান করতে হবে এবং ৭০ শতাংশ কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র খাতে এবং ৩০ শতাংশ মাঝারী শিল্পখাতে প্রদান করতে হবে  ।  ফলে স্বাভাবিক ভাবেই কটেজ ও মাইক্রো উদ্যোক্তাদের জন্য কিন্তু ঋন/বিনিয়োগ বরাদ্ধ রয়েছে যথেষ্ট এখন দেখবার বিষয় এই সকল উদ্যোক্তারা তাদের সক্ষমতা দেখিয়ে কতটুকু ঋন/বিনিয়োগ গ্রহন করতে পারেন কারন তাদের লিগ্যাল ডকুমেন্ট, ব্যাংক এর সাথে সম্পর্কসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা রয়েছে । ক্ষুদ্র ও মাঝারী  উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবেন বলেই আমার ধারনা । 
 
এই সার্কুলারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে, খেলাপী ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহীতাগন এই এ সুবিধা পাবেন না । শুধু তাই নয়, ইতঃপূর্বে  তিনবারের অধিক পুনঃতফসিলকৃত ঋন/বিনিয়োগ গ্রহীতাগনও  এই ঋন/বিনিয়োগ সুবিধার বাইরে থাকবেন । এই ঋন/বিনিয়োগ প্রক্রিয়াটা যেহেতু প্রায় পুরোটাই ব্যাংক এর উপর নির্ভরসীল তাই ব্যাংক নিশ্চয় চাইবে না যে তার বিতরনকৃত ঋন/বিনিয়োগ এমন কারো হাতে গিয়ে পরুক যে তাদের ঋন/বিনিয়োগ ফিরে পেতে কষ্ট হয় বা ফিরে না পান । তবে এক্ষেত্রে নতুন উদ্যোক্তা বাছাই করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বা নতুন উদ্যোক্তাদের এই ঋন/বিনিয়োগ পেতে যাতে কোন সমস্যা না হয় সেদিকে ব্যাংক সমুহকে বিশেষ নজর রাখতে হবে এবং ব্যাংক সেটা করবে বলে আমার বিশ্বাস ।  
 
তবে এই ঋন/বিনিয়োগ গ্রহনের ক্ষেত্রে  উদ্যোক্তাদের কিছু চ্যালেন্জ নিতে হবে, যেমন এই সার্কুলারে চলা আছে এই ঋন/বিনিয়োগ কেবল মাত্র চলতি মুলধনের চাহিদার বিপরীতে ব্যবহার করা যাবে । একটি ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান বাচিয়ে রাখার জন্য চলতি মুলধনের কোন বিকল্প নেই কিন্তু এই ঋন/বিনিয়োগ গ্রহন করার সময় অবশ্যই উদ্যোক্তাদের ভালভাবে ভেবে হিসাব করে দেখতে হবে যে তারা তাদের প্রতিষ্ঠান পুনরায় কবে নাগাদ আবার 
পুরো মাত্রায় চালু করতে পারবে বা সহজভাবে বলতে গেলে রেভেনিউ/প্রফিট আসা শুরু করবে । যদি এ হিসাবটি করতে উদ্যোক্তারা ভুল করেন তাহলে উদ্যোক্তাদের যথেষ্ট মাশুল দিতে হতে পারে কারন এই ঋন/বিনিয়োগ গ্রহন করে যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুরো মাত্রায় চালু করা সম্ভব না হয় তাহলে কিন্তু সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অবস্থা আরো বেশি শোচনীয় এবং খারাপ হয়ে যেতে পারে । তাই ঋণ/বিনিয়োগ গ্রহন করার পাশাপাশি আপনার প্রতিষ্ঠান যাতে পুরো মাত্রায় চালু করা যায় সে বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে । 
 
এই উদ্যোগ ঋন/বিনিয়োগ কার্যক্রম সফল করতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক, সিডিউল ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উদ্যোক্তা, চেম্বার/এসোসিয়েশন,  এবং সর্বপরি সরকারের মনিটরিং টিম একসাথে হয়ে কাজ করতে হবে । তাহলেই আমরা এই কঠিন সময়কে জয় করতে পারবো এবং নতুন করে পুনরায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভুমিকা রাখতে পারবে । 
 
মো: আমিনুল ইসলাম 
প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও 
শাহিন’স হেল্পলাইন 
 


1 Comment

Leave a Reply