একজন উদ্যোক্তা এবং একটি ব্যবসায়িক ঠিকানা !

রিয়াদ হোসেন, পড়ালেখা করছে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই নিয়ে । বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করতে গিয়েই জয়িয়ে পড়ে সেই বিশ্ববিদ্যালয় এর ব্যবসায়িক ক্লাব ( Business Club) এর কাযক্রমের সাথে । সেই থেকে আস্তে আস্তে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন বোনা । কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা, চেষ্টা, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহযোগীতায় আস্তে আস্তে শুরু করে নিজের একটি ব্যবসা । স্বপ্নের বাস্তবায়নের শুরুতেই প্রথম যে ধাক্কাটি আসে যখন সে তার ব্যবসার জন্য ট্রেড লাইসেন্স করতে যায় , ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়েই জানকে পারেন যে, ট্রেড লাইসেন্স করতে হলে এমন একটি ঠিকানায় অফিস/ব্যবসা থাকতে হবে যে ঠিকানাটা সরকারী খাতায় ব্যবসায়িক ঠিকানা হিসাবে নিবন্ধিত । রিয়াদ অনেক চেষ্টা করে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে বোঝাতে যে, এটি অত্যান্ত ছোট একটি ব্যবসা এ ব্যবসাটি সে পড়ালেখার পাশাপাশি করতে চায় যাতে করে সে পড়ালেখা শেষ করতে করতে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে । এখন যে পুজি নিয়ে ব্যবসাটা শুরু করতে যাচ্ছে সেই পুজি দিয়ে কোন ব্যবসায়িক ঠিকানায় অফিস নেয়া তো দুরের কথা চেয়া টেবিল ও কিনা যাবে না ? আর যদি কোনভাবে একটা অফিস নিতেও পারে তাহলে ব্যবসা করার পুজি পাবে কোথা থেকে ? এমনই নানা প্রশ্ন যখন রিয়াদ এর স্বপ্নটাকে মেঘাচ্ছন্ন করে দিচ্ছে তখন হঠাৎ করে তার এক বন্ধুর কথা মনে পড়ে সে বলেছিল, “আরো লাইসেন্স টাইসেন্স পড়ে করিস, আগে ব্যবসা কর টাকা হইলে লাইসেন্স করিস” রিয়াদ তার কথায় কান দেয়নি কারন রিয়াদ বিশ্বাস করে যে, আমরা নিজেরা যদি নিজেদের ফাকিঁ দেই তাহলে দেশ আগাবে কি করে ? দেশের উন্নয়ন ঘটবে কি করে? কি করেই বা দেশের উন্নয়নে যুবরা ভুমিকা রাখবে যদি তারা নিজেরাই অসৎ হয়ে পড়ে? নিজের স্বপ্ন আর একটি ব্যবসায়িক ঠিকানার মাঝে রিয়াদ যখন নিজেকে দিশেহারা মনে করছে ঠিক তখনই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারের ডাকে সে যেন নিজেকে ফিরে পায় “ এই যে ভাই শোনেন যদি কোন ব্যবসায়িক ঠিকানা না থাকে কোন সমস্যা নাই আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, আমাকে একটু চা খাওয়ালেই হবে” রিয়াদ অবাক হয় যে, কিছুক্ষণ আগেই যে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার তাকে আইন, নিয়ম, বিধান এর কথা বলছিল সেই কিনা এখন আবার !

রিয়াদ তখনি এই ভেবে কিছুটা স্বস্তি পায় যে, যাক নিজের স্বপ্নটা তো বাচিয়ে রাখার একটা উপায় পাওয়া গেল । দুদিন বাদেই রিয়াদ যখন ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যাংক এ গেল ব্যবসার নামে ব্যাংক একাউন্ট খুলতে তখন ব্যাংকের অফিসার জানালো যে আপনার ব্যবসায়িক ঠিকানায় ব্যাংক এর হেড অফিস থেকে একটি চিঠি পাঠানো হবে আপনার ঠিকানাটা যাচাই করার জন্য, সেই চিঠিটা নিয়ে আমাদের কাছে আসলেই আমরা আপনার ব্যবসার নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট খুলে দিব । রিয়াদ এবার চিন্তায় পড়ে যায় ! ট্রেড লাইসেন্স এ যে ঠিকানাটা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা কোথায় ? কোন এলাকা ? কার বাড়ী ? কিছুই রিয়াদ জানে না ? কারন এই টিকানাটা ট্রেড লাইসেন্স করবার সময় যে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে চা খাওয়ার জন্য . . . . . . দিয়েছিল সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারই এই ব্যবসায়িক ঠিকানাটা লিখে দিয়েছিল । রিয়াদ ব্যাংক অফিসারকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে যে, চিঠিটা যদি তার বর্তমান ঠিকানায় পাঠাতে । ব্যাংক এর অফিসার কোনভাবেই সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিলেন । শেষমেষ পরিচিত একজন ব্যাংকারকে খুজে বের করে রিয়াদ একটি ব্যাংক একাউন্ট খোলে । রিয়াদ এবার নিশ্চিন্ত হয়ে ব্যবসা চালাতে থাকে আস্তে আস্তে ব্যবসাটা বড়ও হতে থাকে, রিয়াদ ভাবে যেহেতু নিজের ইনকাম হচ্ছে, সেহেতু অবশ্যই সরকারকে কর দেয়া উচিৎ অনলাইন এ গিয়ে রিয়াদ সহজেই ই-টিন খুলে ফেলে আর মনে মনে ভাবে যাক এবার অত্যান্ত কাউকে চা খাওয়ানো বা অনুরোধ করতে হয়নি নিজেই কাজটি করতে পেরেছে ।

কিছুদিন পর রিয়াদ এমন কিছূ পণ্য কেনাবেচার সাথে জড়িত হয়ে পড়ে যার উপর ভ্যাট প্রযোজ্য তাই এবার রিয়াদ ভ্যাট সাটিফিকেট করার জন্য ব্যবসার সব কাগজ নিয়ে ভ্যাট অফিসে যায় । ভ্যাট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার জানালো যে ভ্যাট সাটিফিকেট করতে কোন সরকারী ফি নাই । তবে আপনার যে ব্যবসায়িক ঠিকানাটা আছে সেটা বাস্তবে গিয়ে ভিজিট করার পরই আপনার প্রতিষ্ঠানের নামে ভ্যাট সাটিফিকেট ইস্যু করা যাবে । আবারো সেই একই প্রশ্ন ? আবারো সেই একই সমস্যা? ব্যবসায়িক ঠিকানা ? যে ঠিকানায় রিয়াদ কোন দিন যায়নি সে ঠিকানায় ভ্যাট অফিসার ভিজিট করতে গেলে কি দেখতে পাবে ? রিয়াদ বিষয়াট ভ্যাট অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে বোঝাতে চেষ্টা করে । ভ্যাট অফিসারের একটাই পরামর্শ ট্রেড লাইসেন্স এ যে ঠিকানা ব্যবসায়িক ঠিকানা হিসাবে লেখা রয়েছে সেই ঠিকানায়ই আমরা ভিজিট করতে যাবো আর অন্য কোন ঠিকানায় আপনার অফিস থাকলে ট্রেড লাইসেন্স এর ঠিকানা বদল করে আনুন । এতোদিনে রিয়াদ ব্যবসা, সম্পকে অনেক কিছু শিখেছে, তার অনেক নেটওয়াক তৈরী হয়েছে, সেই সব ব্যবহার করে আর নিজের বাস্তব অভিÁতা কাজে লাগিয়ে সেই মেষ ভ্যাট সাটিফিকেট ও বানিয়ে ফেলে ।

রিয়াদ এর ব্যবসা ভালই চলছে এই কয়েক বছর ধরে এখন কিছু বিনিয়োগ বাড়াতে পাড়লে ব্যবসাটা আরেকটু বড় করা যেতো । সে একটা ব্যাংক এ এসএমই ঋণ এর জন্য আবেদন করে । ব্যাংক কিছুদিন পড় তাকে জানায় যে, আপনার সব কাগজপত্র ঠিক আছে তবে আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর ব্যবসায়িক ঠিকানায় আমরা ভিজিট করতে যাবে, যথারিতী রিয়াদ তাদের সব খুলে বলে, ব্যাংক পরামশ দেয় যে যদি আপনি এই ঠিকানা বদল করে এমন একটি ব্যবসায়িক ঠিকানায় অফিস নিতে পারেন যেখানে গেলে আপনাকে পাওয়া যাবে তাহলে ব্যাংক আপনাকে ঋণ দিতে পারবে অন্যথায় পারবে না ? রিয়াদ বলে আপনার আমাদের অফিস এ আসেন ভিজিট করেন , দেখেন আমরা সত্যি ব্যবসা করি কিনা ? ব্যাংক জানায় যে আমরা শুধূ সেই ব্যবসায়িক ঠিকানা ভিজিট করতে পারি যেটা আপনার ট্রেড লাইসেন্স এর মধ্যে দেয়া আছে ।

রিয়াদ ভাবে একটি ব্যবসায়িক ঠিকানার যতো গুরুত্ব , সেই গুরুত্ব যদি উদ্যোক্তা/ব্যবসায়িদেরকে দেয়া হতো তাহলে আরো অনেক বেশি উদ্যোক্তা/ব্যবসার জন্য এ দেশের যুবরা এগিয়ে যেতে পারতো ?
আমার চিন্তাটা ভুলও হতে পারে ? তবে অনেকেই আমার সাথে একমত হবেন বলে আশা করি কারন এখনই সময় বাস্তবতার নিরিখে এই ছোট ছোট আইনগুলো সংশোধন করে নতুন/নবিন উদ্যোক্তাদের চলার পথ কন্টকমুক্ত করা আর এ দায়িত্ব আমাদের সকলের ।



Leave a Reply