পণ্য বাজারজাতকরনের দৃষ্টিভঙ্গী !

অনেকদিন আগে একটি ছোট ঘটনা শুনেছিলাম, ঘটনাটা ছিল এরকম, এক জুতা কোম্পানী তাদের জুতা বাজারজাত করার জন্য নতুন জায়গা খুজছিল, খুজতে খুজতে তারা একটি  বিশালদ্বীপ এ এসে পৌছালো, দ্বীপ এ পৌছে তারা জানতে পারলো যে এর আগে কোন জুতা কোম্পানী এই দ্বীপে আসেনি । তারা এই খবরটি পাওয়ার পর খুব খুশি হলো তারা মনে করলো যে, যেহেতু এর আগে কোন কোম্পানী এই দ্বীপে আসেনি তাই তাদের কোন প্রতিযোগি নেই তাদের ব্যবসা অনেক ভাল হবে, এই ভেবে তারা আরো খোজ খবর নিতে শুরু  করলো এবং তারা জানতে পারলো যে, এই দ্বীপের লোকেরা জুতা ব্যবহার করে না  তাই এখানে কখনও কোন জুতার কোম্পানী এর আগে আসেনি । যে দ্বীপে কোন মানুষ জুতা ব্যবহার করে না সেখানে একটি জুতার কোম্পানী কিভাবে ব্যবসা করবে ? কে কিনবে তাদের জুতা ? এই ভেবে তারা তাদের সমস্ত কাজ সেই দ্বীপ থেকে উঠিয়ে চলে গেল এই ভেবে যে এখানো ব্যবসার কোন সুযোগ নেই ।
তারা শহরে গিয়ে অন্যদের জানালো যে, তারা এমন এক দ্বীপ গিয়েছিল যেখানে কেও কখনও জুতা ব্যবহার করেনি এবং তারা সেখানে জুতা বিক্রির কোন সম্ভাবনা দেখতে না পেয়ে ফেরত এসেছে ।  শহরের একজন ছোট জুতার ব্যবসায়ী চিন্তা করে দেখলো যে, আরে জুতার ব্যবসার করার জন্য তো সেই দ্বীপটাই সবচেয়ে উত্তম কারন, দ্বীপবাসীরা জুতার ব্যবহার জানেনা বিধায় তারা জুতা ব্যবহার করে না কিন্তু কোনভাবে যদি তাদের জুতা ব্যবহারের উপকারিতা সম্পকে তাদের বোঝানো যায়  তাহলে সেই দ্বীপটিই হয়ে উঠবে জুতার ব্যবসার জন্য সবচেয়ে ভাল একটি জায়গা ।  যেই কথা সেই কাজ । তিনি তার কোম্পানীর লোকজন নিয়ে সেই দ্বীপটাতে পৌছে গেল । কিন্তু যখনই তারা দ্বীপবাসীকে জুতার ব্যবহার, জুতা ব্যবহারের  উপকারিতা ইত্যাদি বোঝাতে গেলেন তখন সবাই তাদের পাগল বলতে লাগলো কেও তাদের কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না । কিন্তু আস্তে আস্তে দ্বীপবাসীকে তারা বোঝাতে সক্ষম হলেন এবং এক এক করে প্রতিদিন জুতা বিক্রি বাড়তে লাগলো । এই খবর পেয়ে অন্যান্য জুতার কোম্পানীগুলোও সেখানে তাদের জুতা বিক্রির জন্য যেতে লাগলো ।
শিক্ষনীয় বিষয়:
উপরে উল্লেখিত ঘটনা থেকে একটা বিষয় খুব সহজে অনুমেয় যে, আপনার পণ্য বিক্রির জন্য বাজার আপনাকেই তৈরী করতে হবে । অন্যদিকে আপনি আপনার বাজার তৈরীর (সৃজনশীল প্রোডাক্ট এর মাধ্যমে) যতো বেশি বুদ্ধি মত্তার পরিচয় দেবেন ততো বেশি আপনি ব্যবসায় সফলতা পাবেন । উপরে যে দ্বীপটির কথা বলা হয়েছে সেখানে  একই পণ্য বিক্রির জন্য দুইজন ব্যবসায়ী তাদের দুই রকম বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছেন একজন সফল হয়েছেন আরেকজন সফল হতে পারেনি ।
শুধুবুদ্ধিমত্তা নয় আপনার ব্যবসা সফল করার জন্য নতুন বাজার তৈরীর জন্য নিচের বিষয়গুলোও খেয়াল রাখা প্রয়োজন :
পণ্যের নিজস্বতা:
ব্যবসার শূরুতেই আপনাকে চিন্তা করতে হবে যে, আপনি যে পণ্য নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে যাচ্ছেন তা অন্যদের চাইতে কতটুকু আলাদা  অথ্যাৎ আপনার পণ্যের নিজস্বতা রয়েছে কিনা । যেমন: বাজারে এখন রাইস তেল নামে এক ধরনের নতুন তেল বের হয়েছে । যা একদমই অন্য যে কোন পণ্যের চেয়ে আলাদা । যে কোন নতুন পণ্য কিনতে/ব্যবহারে  মানুষ আগ্রহ না দেখালেও আস্তে আস্তে মানুষ সেটার প্রতি ঝুকতে থাকে যদি সতিক্যার অথেই সেটি ভাল গুনাগুন সম্পুন্ন পন্য হয় ।
পণ্যের চাহিদা:
উপরের পণ্যটি উদাহরন হিসাবে ধরেই যদি বলি এখনো মানুষ রাইস তেল ব্যবহারে তেমন আগ্রহী হয়ে উঠেনি বিভিন্ন কারনে মানে এখনো পণ্যের চাহিদা তেমনভাবে তৈরী হয়নি । তবে মজার বিষয় যতটুকু চাহিদাই তৈরী হয়েছে বা বাজার তৈরী হয়েছে তা কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম বাজারজাতকারী  কোম্পানীর কারনেই হয়েছে এবং পুরো ব্যবসাটাই তারা করতে পেরেছে । ঠিক এই ব্যবসায়ীই যদি সয়াবিন তেল নিয়ে বাজারে আসতে তাহলে হয়তো অন্য কোম্পানীর ভিরে হারিয়ে যেত বা এতটুকু ব্যবসায় করতে পারতো না ।
পণ্যের গুনাবলী সঠিকভাবে উপস্থাপন:
আপনি বাজারে যে পণ্যই বাজারজাত করুন না কেন ? পণের গুনগত মান নিশ্চিত করা অত্যান্ত জরুরী । কোন নিম্ন মানের পণ্য নিয়েই আপনি বাজারে বেশি দিন টিকে থাকতে পারবেন না ।  রাইস তেল এমন একটি পণ্য যেটি সম্পকে গুনগতমান বা উপকারিতা সম্পকে ক্রেতা তেমন কিছু জানেন না বা তেমন ধারনাও নেই তাই আপনি যদি আপনার পণ্যের গুনগতমান সঠিকভাবে ক্রেতার কাছে তুলে ধরতে না পারেন তাহলে কোনভাবেই ক্রেতা আপনার পণ্য কিনতে আগ্রহী হবে না । কেন এটি ভাল ? কেন আপনি এটি কিনবেন ?  কেন এটি অন্য পণ্য থেকে আলাদা ইত্যাদি ক্রেতার সামনে তুলে ধরতে হবে ।
পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ:
পন্যের মান নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে থাকতে হবে আপোষহিন । আপনি যদি পণ্যের মূল্য কমাতে বা অধিক মুনাফার জন্য পণ্যের মান সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন না করেন তাহলে যখন বাজারে আপনার আরো প্রতিযোগী আসবে তখন আপনার বাজারে টিকা থাকা কঠিন হয়ে উঠবে । তাছাড়া ক্রেতারাও আস্তে আস্তে আপনার পণ্য ছেড়ে অন্য পণ্যের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে । তাই প্যাকেজিং, লেবেলিং, বোতল, ইত্যাদি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে ।
পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করা:
উপরের সবগুলো কাজ ঠিকঠাক মতো করে আপনি বাজার তৈরী করলেন তিন্তু আপনার পণ্য বাজারজাত করনে এমন পদ্ধতি ব্যবহার করলেন যে, ক্রেতার চাহিদার সাথে আপনার পণ্য বাজারজাত করতে পারলেন না । তখন ক্রেতা স্বাভাবিকভাবেই অন্য কোম্পানীর পণ্যের দিকে আগ্রহী হয়ে উঠবে । তাই পণ্য বাজারজাত করনে এক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে যেখানে যেমন পণ্য ব্যবস্থা করা প্রয়োজন তেমনিভাবে পণ্য বাজারজাত করনের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে এমন না হয় কোথাও পণ্যের চাহিদা আছে পণ্য নেই কোথাও পণ্য আছে চাহিদা নেই তাই পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা নিতে হবে ।

 



Leave a Reply