ব্যবসার সম্ভাব্যতা যাচাই, ব্যবসা নির্বাচন/ সম্প্রসারন ।

একজন উদ্যোক্তা কি ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, কোন পণ্য বা সেবা উৎপাদন বা বিক্রি করবেন এই সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে বা তাৎক্ষনিকভাবে নেয়ার বিষয় নয়। কোন্ পণ্য উৎপাদন বা বিক্রি করলে ঝুঁকি কমিয়ে আনা যাবে এবং সফলতার সম্ভাবনাকে অনেকাংশে নিশ্চিত করা যাবে-এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে। তা করলে আস্থার সাথে অগ্রসর হওয়া যাবে আর এই প্রক্রিয়াটি হচ্ছে ব্যবসা বা উদ্যোগের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রক্রিয়া।

ব্যসার সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ব্যবসা শূরু করলে তা কোন দিনই লাভ জনক হবে না, ফলে কোন এক সময়  ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। তাই ব্যবসা শূরু করার পূর্বেই এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা জরুরী প্রয়োজন।
ব্যবসার সম্ভাব্যতা যাচাই এর অনেক গুলো প্রক্রিয়া আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে এর মধ্য থেকে সহজ দুটি প্রক্রিয়া এখানে শেয়ার করা হলো  :
প্রক্রিয়া : ০১ : সাধারণ/সহজ ব্যবসার সম্ভাব্যতা যাচাই :
এই প্রক্রিয়ার প্রধান প্রধান উপাদান গুলি নিম্নোক্তভাবে বিন্যস্ত করা যায়।
১.    বাজার সম্ভাব্যতা/চাহিদা যাচাই
২.    প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি প্রয়োজনসমূহ
৩.    মূলধন এবং অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজনসমূহ
৪.    বাণিজ্যিক রীতিনীতি ও আইনগত বিষয়াদি
৫.    পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে বিবেচ্য বিষয়
১.বাজার সম্ভাব্যতা/চাহিদা যাচাই :
পণ্য নির্ভর বাজার সম্ভাব্যতা/চাহিদা ঃ বাজার সম্ভাব্যতা/চাহিদা যাচাই করতে হবে যেসব পণ্য বা সেবা প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে তার নিরিখে।

২. প্রযুক্তিগত এবং কারিগরি প্রয়োজনসমূহ
প্রযুক্তি ও কারিগরি বিষয়াদি নির্ভর করবে উদ্যোগটি উৎপাদনমুখী নাকি কেনা বেচা বা বাণিজ্যমুখী তার উপর।
উৎপাদনমুখী উদ্যোগের ক্ষেত্রে অন্যতম বিবেচ্য বিষয়সমূহ হচ্ছে-
অত্যন্ত সতর্কতার সাথে এলাকা নির্বাচন করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রধান প্রধান বিবেচ্য বিষয়গুলো হচ্ছে ঃ

  • জমি,শেড বা ভবন নির্মাণ অথবা ভাড়া নেয়া।এলাকা ভিত্তিতে এসবের মূল্য যাচাই করা।
  • বিদ্যুৎ, পানি ইত্যাদি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা
  • বাজারের সাথে যোগাযোগ
  • আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক কাছাকাছি আছে কিনা
  • আশেপাশে শিল্পো উৎপাদন মুখী কর্মকান্ড আছে কিনা
৩. মূলধন এবং অন্যান্য আর্থিক প্রয়োজনসমূহ:
মূলধন যেকোন উদ্যোগের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পুঁজি বা মূলধন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। মূলধনের পরিমানের উপর নির্ভর করবে উদ্যোগের আকার কি হবে এবং বিনিয়োগযোগ্য মূলধন দিয়ে আদৌ বিবেচনাধীন উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করা যাবে কিনা। মূলধন প্রাপ্তির উৎসগুলো সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া বাঞ্চনীয়।
দুই ধরনের মূলধন সাধারনত আমাদের ব্যবসার সাথে জড়িয়ে থাকে আর তাহলো:
ক. স্থায়ী মূলধন ঃ
জমি, দালানকোঠা, যন্ত্রপাতি,অফিস সরঞ্জাম, গাড়ি ইত্যাদি অর্থাৎ যেসব জিনিস একটি   নির্দিষ্ট মেয়াদ  পর্যন্ত ব্যবহারযোগ্য থাকে।
খ. চলতি মূলধন ঃ
কাঁচামাল, জ্বালানী, শ্রমশক্তি প্রভৃতি অর্থাৎ উৎপাদন প্রক্রিয়ায় যেগুলো নিয়ত ব্যবহার করা যায়, সেসব  খাতে যে পুঁজি প্রয়োজন হয়।
প্রকল্পের অর্থায়ন ঃ
মূলধন প্রাপ্তির নিরিখে প্রকল্পের ধরন,আকার ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পাশাপাশি  সামগ্রিকভাবে প্রকল্পের অর্থায়নের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। নিজ উৎস এবং বাইরের উৎস থেকে মূলধন প্রাপ্তির বিষয়টিকে খুব বাস্তবসম্মতভাবে হিসেব করতে হবে যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নের  মাঝপথে মূলধন প্রবাহে কোন বিঘœ না ঘটে।
মুনাফা প্রাক্কলন ঃ
সমুদয় বিনিয়োগকৃত মূলধন, সমুদয় খরচ এবং অন্যান্য বিবেচনার পর প্রকল্প থেকে পর্যায়ক্রমে কি মুনাফা অর্জিত হতে পারে তার একটি অনুমান থাকা বাঞ্চনীয়। মোট বিক্রয় এবং  প্রশাসনিক ব্যয়, মূলধন বাবদ ব্যয় প্রভৃতি বাদ দিলে প্রাক্কলিত মুনাফার একটি চিত্র পাওয়া যায়।
৪. বাণিজ্যিক রীতিনীতি ও আইনগত বিষয়াদি :
  • কোন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সরকারি বিধিমালা মেনে চলার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, লাইসেন্স করা, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মাবলী, পরিবেশগত বিধিমালা ইত্যাদি।
  • কোন কোন পণ্য উৎপাদন এবং বিক্রির ক্ষেত্রে সরকারি নীতিগত সমর্থন এবং সাহায্য পাওয়া যেতে পারে।  আবার কোন কোন ক্ষেত্রে সরকারি নীতি বিপক্ষেও যেতে পারে । এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে অগ্রসর হওয়া ভাল।
৫. পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে বিবেচ্য বিষয়:
সকলেরই নানাবিধ সামাজিক ও পারিবারিক দায়-দায়িত্ব ও অঙ্গীকার থাকে । প্রকল্প ব্যবস্থাপনা / পরিচালনার সাথে এ বিষয়গুলো সম্পৃক্ত। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন।


Leave a Reply