উদ্যোক্তার সমস্যা সমাধান চক্র

 

উদ্যোক্তা জীবন শুরুর সময় অথবা চালিয়ে নেবার সময় কোন প্রকার সমস্যার সম্মুখিন হননি এমন উদ্যোক্তা আমার মনে হয় খুজে পাওয়া যাবে না  । উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ম সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় আবার তারা তাদের নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সমাধান করে এগিয়েও যান । যারা এই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন না তাদেরই বেশির ভাগ কোন না কোন সময় তাদের উদ্যোক্তা জীবন এর ইতি টেনে নতুন করে আবার নতুন কিছু শুরু করেন  বেচে থাকার তাগিদে ।

আবার এমনও চিত্র দেখা যায় যে, একটি সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে আরেকটি সমস্যা তৈরী করে ফেলছেন ফলে তার উদ্যোগ এর   একটি বড় সময় ব্যায় করতে হচ্ছে এই সকল সিরিজ অব সমস্যা সমাধান তৈরী করার জন্য ।  উদ্যোগ যেখানে রয়েছে সেখানে সমস্যা থাকবেই । সমস্যা বিহীন উদ্যোগ আর মরুভূমিতে জল খুজে পাওয়া প্রায় একই ব্যাপার । তাহলে কিভাবে আপনি আপনার উদ্যোগ এর সমস্যাগুলো কম সময়ে স্থায়ীভাবে সমাধান করবেন যাতে করে নতুন কোন সমস্যাও তৈরী না হয় । আজকে এমনই একটি পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করবো ।

কয়েকদিন আগে BYEAH কতৃক আয়োজিত একটি প্রশিক্ষণ এ অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিল । সেখান থেকেই এই পদ্ধতিটা শেখা বা দেখা । আমরা হয়ত অনেকেই  এই পদ্ধতির সাথে পরিচিত আগে থেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করে হয়তো সমস্যার সমাধানও করছি । তবুও একটি নিজের মতো করে যারা নতুন তাদের জন্য আজকের এই লেখা । উদ্যোক্তার সমস্যা সমাধান চক্র  ।

সমস্যা সমাধান চক্র

উপরের সমস্যা সমাধান চক্রটি ভালভাবে খেয়াল করে দেখুন এই সমাধান  চক্রের ৫ টি ধাপ আছে

১ম  ধাপ :  সমস্যা চিýত  করা ।

২য় ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান খুজে বের করা ।

৩য় ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান প্রয়োগ এর প্রভাব বিবেচনা করা ।

৪র্থ ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান এবং এর প্রভাব এর ভিত্তিতে কার্যকরী  সমাধান বেছে নেয়া ।

৫ম ধাপ : সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া ।

কিভাবে কাজ করে এই সমস্যা সমাধান চক্র ।

খুব সহজ ভাবে যদি আমরা এই চক্রটাকে খেয়াল করি তাহলে আমি সমস্যা চিýত করে ( ১ম ধাপ ) সরাসরি সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ গ্রহন ( ৫ম ধাপ ) করতে পারি । যদি আমি সমাধান চক্রটি উল্টাদিক ( Anti Clock wise ) থেকে ব্যবহার করি । কিন্তু সমস্যা হলো তাহলে আপনি বাকি যে ধাপগুলো আছে সেই ধাপগুলো আর ব্যবহার করার সুযোগ থাকলো না তার মানে এই সমাধান চক্রটি আসলে আপনি ব্যবহার করলেন না । আপনি আপনার মতো করে সমস্যা চিýত হওয়ার পর তা সমাধান করলেন । এতে করে আর কোন সমস্যা তৈরী হলো কিনা । এই সমাধানটি কতটা কার্যকরি ইত্যাদি আর বিবেচনায় আনলেন না ফলে এই সমস্যাটাই আবার আপনার সামনে আসলে পারে অথবা এই সমস্যা সমাধানের ফলে আরো নতুন সমস্যা তৈরী হতে পারে । এই কারনে সমস্যা সমাধান চক্রটি ব্যবহার করতে হবে ঘরির কাটা যে দিকে ঘোরে ( Clock wise) ঠিক সেই দিক অনুসারে ।

একটি উদাহরন দিয়ে বলা যাক ।

১ম ধাপ : আপনার প্রতিষ্ঠানে একটি  সমস্যা  চিýত হলো যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে যে সকল কর্মী রয়েছে তাদের অনেকেই অফিস এর টাইম -টেবিল মানছেন না , এবং না বলেই হঠাৎ করে ছুটি নিয়ে নিচ্ছে ফলে আপনার অফিসের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে ।

আপনি সমাধান চক্রটি ব্যবহার না করে সরাসরি

৫ম ধাপ : ব্যবহার করলেন সিদ্ধান্ত নিলেন যে, , কিছু কর্মীকে ছাটাই করে দিবেন । এই ঘটনা দেখে অন্যরা ভয় পেয়ে সময় মতো আসবে এবং ছুটিতে যাবার আগে আপনাকে বলে যাবে । আপনার এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে এর প্রভাব কি হতে পারে :

  • হতে পারে আপনার অন্য কর্মীদের মনে একটি ভয়ের জন্ম নিতে পারে যে, যে কোন সময় আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ছাটাই করে দিতে পারেন । তাদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বোধ হতে পারে ।
  • আপনি যাদের ছাটাই করেছেন তারা যে সকল কাজ করতো সেই কাজগুলো করার মতো অন্য কোন কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানে নেই ফলে সেই কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে ।
  • নতুন করে কর্মী নিয়োগ দিতে সময়, টাকা, ইত্যাদি ব্যায় হবে যা আপনার প্রতিষ্ঠানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
  • ইত্যাদি ইত্যাদি

এই একই সমস্যা যদি আপনি সমাধান চক্র ব্যবহার করে করতেন তাহলে কি হতো :

১ম ধাপ : আপনার প্রতিষ্ঠানে একটি  সমস্যা  চিýত হলো যে, আপনার প্রতিষ্ঠানে যে সকল কর্মী রয়েছে তাদের অনেকেই অফিস এর টাইম -টেবিল মানছেন না , এবং না বলেই হঠাৎ করে ছুটি নিয়ে নিচ্ছে ফলে আপনার অফিসের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হচ্ছে ।

২য় ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান খুজে বের করা । কি কি সমাধান হতে পারে এই সমস্যা সমাধানের জন্য

  • কিছু কর্মীকে ছাটাই করে দেয়া যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সময় মতো অফিস এ আসে এবং বিনা নোটিশ এ ছুটিতে না থাকে ।
  • কর্মীদের অফিসে আসার সময় টা কিছুটা ফেক্সিবল করে দেয়া ( ধরা যাক অফিস শুরু হয় সকাল ৯ টায় । আপনি ঠিক করে দিলেন যে, ৯:৩০ পর্যন্ত অফিস শুরুর সময় ধরা হবে ) তবে যে যখনই আসুক না কেন তাকে ৮ ঘন্টা অফিস এ থাকতে হবে । মানে যদি কেও ১০ মিনিট দেরীতে আসে তাহলে তিনি ১০ মিনিট দেরিতে যাবেন ।
  • প্রতি মাসে এবং বছর শেষে যে/যিনি সব চেয়ে সময় মতো অফিসে এসেছে তাকে সবার উপস্থিতীতে পুরস্কৃত করা যেতে পারে ।
  • বিনা নোটিশ এ ছুটিতে কেও থাকলে যথাযথ কারন দশার্নোর ভিত্তিতে সেই ছুটি মন্জুর করা যেতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী  মাসে /বছরে ছুটি পাবেন তা সুন্দর করে এইচআর ম্যানুয়াল এ উল্লেখ করা যেতে পারে অন্যথায় বেতন কেটে রাখা হবে ।

৩য় ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান প্রয়োগ এর প্রভাব বিবেচনা করা ।

সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত : 

কিছু কর্মীকে ছাটাই করে দেয়া যাতে অন্যরা এ থেকে শিক্ষা নিয়ে সময় মতো অফিস এ আসে এবং বিনা নোটিশ এ ছুটিতে না থাকে ।

প্রভাব :

  • হতে পারে আপনার অন্য কর্মীদের মনে একটি ভয়ের জন্ম নিতে পারে যে, যে কোন সময় আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ছাটাই করে দিতে পারেন । তাদের মধ্যে নিরাপত্তার অভাব বোধ হতে পারে ।
  • আপনি যাদের ছাটাই করেছেন তারা যে সকল কাজ করতো সেই কাজগুলো করার মতো অন্য কোন কর্মী আপনার প্রতিষ্ঠানে নেই ফলে সেই কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে ।
  • নতুন করে কর্মী নিয়োগ দিতে সময়, টাকা, ইত্যাদি ব্যায় হবে যা আপনার প্রতিষ্ঠানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
  • ইত্যাদি ইত্যাদি

সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত : 

কর্মীদের অফিসে  আসার সময় টা কিছুটা ফেক্সিবল করে দেয়া ( ধরা যাক অফিস শুরু হয় সকাল ৯ টায় । আপনি ঠিক করে দিলেন যে, ৯:৩০ পর্যন্ত অফিস শুরুর সময় ধরা হবে ) তবে যে যখনই আসুক না কেন তাকে ৮ ঘন্টা অফিস এ থাকতে হবে । মানে যদি কেও ১০ মিনিট দেরীতে আসে তাহলে তিনি ১০ মিনিট দেরিতে যাবেন ।

প্রভাব :

  • এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে একদিকে  অফিসের প্রাপ্য সময়টুকু ( ৮ঘন্টা) পেয়ে যাবে অন্যদিকে কর্মীরাও সন্তুষ্ট থাকবে যে, অফিস তাদের কথা বিবেচনা করে একটি ভাল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ফলে তাদের সকালে অফিসে আসার জন্য তারাহুরা করার কোন প্রয়োজন হবে না ।

সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত : 

  • প্রতি মাসে এবং বছর শেষে যে/যিনি/যারা সব চেয়ে সময় মতো অফিসে এসেছে তাকে সবার উপস্থিতীতে পুরস্কৃত করা যেতে পারে ।

প্রভাব :

এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে যে/যিনি/যারা  প্রতি মাসে এবং বছরে পুরস্কার পাবেন তারা সবাই গর্বিত অনুভব করবে এবং প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে সবাই এই পুরস্কার পাবার জন্য সময় মতো অফিসে আসতে শুরু করবে বলে আশা করা যায় ।

সম্ভাব্য সিদ্ধান্ত : 

  • বিনা নোটিশ এ ছুটিতে কেও থাকলে যথাযথ কারন দশার্নোর ভিত্তিতে সেই ছুটি মন্জুর করা যেতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী  মাসে /বছরে ছুটি পাবেন তা সুন্দর করে এইচআর ম্যানুয়াল এ উল্লেখ করা যেতে পারে অন্যথায় বেতন কেটে রাখা হবে ।

প্রভাব :

এই সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে অফিশিয়াল একটি শৃঙ্খলা তৈরী হবে ছুটি নেবার ক্ষেত্রে এবং যে কোন  কর্মীর জন্য বেতন কেটে নেয়া একটি সম্মানহানীকর বিষয়, ফলে প্রয়োজন না হলে  কেও ছুটি নিবে না । আবার যেহেতু যথাযথ কারন দর্শানের ভিত্তিতে ছুটি মন্জর করানো যাবে তাই  কর্মীরাও এ সিদ্ধান্ত সহজে মেনে নিবেন । কর্মীদের মধ্যে কোন অসন্তোষ দেখা দিবে না বলে আশা করা যায় ।

৪র্থ ধাপ : সম্ভাব্য সমাধান এবং এর প্রভাব এর ভিত্তিতে কার্যকরী  সমাধান বেছে নেয়া ।

৩য়ধাপে বিস্তারিত আলোচনার প্রেক্ষিতে কর্মী ছাটাই ব্যতীত অন্যান্য সকল সমাধানগুলো গ্রহন করা যায় এবং এই সমাধান গুলো গ্রহণ করলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা সময়মতো অফিসে আসবে এবং বিনা নোটিশ এ কেও ছুটিতে থাকবে না বলে আশা করা যায় । ফলে প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সমস্যা সমাধান  কল্পে নিম্নোক্ত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করা যায় ।

  • কর্মীদের অফিসে আসার সময় টা কিছুটা ফেক্সিবল করে দেয়া ( ধরা যাক অফিস শুরু হয় সকাল ৯ টায় । আপনি ঠিক করে দিলেন যে, ৯:৩০ পর্যন্ত অফিস শুরুর সময় ধরা হবে ) তবে যে যখনই আসুক না কেন তাকে ৮ ঘন্টা অফিস এ থাকতে হবে । মানে যদি কেও ১০ মিনিট দেরীতে আসে তাহলে তিনি ১০ মিনিট দেরিতে যাবেন ।
  • প্রতি মাসে এবং বছর শেষে যে/যিনি সব চেয়ে সময় মতো অফিসে এসেছে তাকে সবার উপস্থিতীতে পুরস্কৃত করা যেতে পারে ।
  • বিনা নোটিশ এ ছুটিতে কেও থাকলে যথাযথ কারন দশার্নোর ভিত্তিতে সেই ছুটি মন্জুর করা যেতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানে একজন কর্মী  মাসে /বছরে ছুটি পাবেন তা সুন্দর করে এইচআর ম্যানুয়াল এ উল্লেখ করা যেতে পারে অন্যথায় বেতন কেটে রাখা হবে ।

৫ম ধাপ : সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেয়া ।

প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধানকল্পে ৪র্থ ধাপে যে সকল কার্যক্রম ( সমাধান) গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা যত তারাতারি সম্ভব বাস্তবায়ন এর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ  ।

 

 



Leave a Reply